সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে—কথাটি শতভাগ সত্যি নায়করাজ রাজ্জাকের বেলায়। তাঁর স্ত্রী খায়রুন্নেসা লক্ষ্মী প্রথম কোনো পত্রিকার কাছে বললেন তাঁর জীবনের ‘হিরো’ সম্পর্কে। ব্যতিক্রমী এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবির বকুল। ২০০৬ সালের ৫ জানুয়ারি ‘আনন্দ’তে ছাপা হয়েছিল সেই সাক্ষাৎকার। আজ ২৩ জানুয়ারি রাজ্জাকের জন্মদিন উপলক্ষে সেই সাক্ষাৎকার পুনঃপ্রকাশ করা হলো।
যত দূর আমরা জানি, আপনারা যখন কলকাতা ছেড়ে এ দেশে আসেন, তখন বাপ্পা একদম ছোট। একটা অনিশ্চয়তা আপনাদের চোখে-মুখে। রাজ্জাক ভাই তখন সাধারণ একজন মানুষ। এরপর রাজ্জাক ভাইয়ের অভিনেতা হিসেবে উত্তরণ এবং নায়করাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া। জীবনসঙ্গী হিসেবে শুরু থেকেই আপনি তাঁর সঙ্গে ছায়ার মতো ছিলেন, আছেন। নায়করাজ রাজ্জাকের এই উত্তরণ সম্পর্কে আপনার কাছ থেকে কিছু শুনতে চাই।
তারপর কত সময় গেল। ও আস্তে আস্তে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আর আমি বাচ্চা ও ঘরসংসার সামলাতে লাগলাম। অনেকেই তখন আমাকে এসে ওর সম্পর্কে নানা গালগল্প করত, আপনার হিরোকে (ও যখন থেকে ছবির হিরো হলো, তখন থেকে এখন পর্যন্ত আমি ওকে ‘হিরো’ বলেই ডাকি) আজ অমুকের সঙ্গে ওমুক জায়গায় দেখেছি। আর আপনি ঘর সামলাচ্ছেন। এসব কি দেখেন না? আমি ওদের এসব মুখরোচক কথা কখনোই কানে নিতাম না। কারণ, আমার হিরো ছবিতে বিভিন্ন নায়িকার সঙ্গে কাজ করে, সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে গুঞ্জন হতেই পারে। যখন ফার্মগেটে হলিক্রসের সামনে আমরা থাকতাম। তখন অনেক মেয়ে বাড়িতে আসত ওর সঙ্গে দেখা করতে, অটোগ্রাফ নিতে। দেখতাম, ভক্তরা ওর কাপড় ছুঁয়ে দেখছে, জুতা ছুঁয়ে দেখছে। তাকে জড়িয়ে ধরছে। দেখতাম, কিন্তু কিছুই বলতাম না। আমি কখনোই তার কোনো কিছুতেই বাধা দিতাম না; বরং তাকে সাহস দিতাম। তারপর স্বাধীনতার আগে নিজেরা গুলশানের এই জায়গা কিনলাম। নিজেদের বাড়িতে (লক্ষ্মীকুঞ্জ) উঠলাম। এখনো এই বাড়িতে আছি।
রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে আপনার প্রথম কবে দেখা হয়েছিল?
না, ওইভাবে আমাদের মধ্যে দেখা বা জানাশোনা হয়নি। কলকাতায় টালিগঞ্জে আমরা যে বাড়িতে থাকতাম, ঠিক সেই বাড়ির পাশে ওর এক আত্মীয় থাকতেন। একদিন বাড়ির গেটের সামনে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম, তখন নাকি তাঁদের কেউ আমাকে দেখে ফেলে। তারপরই ও বাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব আসে। এরপর তারা আমাকে দেখতে আসে এবং সেদিনই আংটি বদল হয়ে যায়। তখন আমার বয়স ছিল ১২ বছর। তার দুই বছর পর আমাদের বিয়ে হয়।
প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে রাজ্জাক অভিনীত প্রথম কোন ছবিটি দেখেন?
আমি ওর অনেক ছবিই হলে গিয়ে দেখেছি। প্রথম দেখেছি ‘আগুন নিয়ে খেলা’। ছবি দেখার সময় কোথাও ভালো না লাগলে সমালোচনাও করতাম। বলতাম, এই জায়গায় তুমি আরও ভালো করতে পারতে। কিন্তু কখনোই তার নায়িকাদের নিয়ে কিছু বলতাম না। মাঝে অবশ্য একবার কবরীকে জড়িয়ে হিরোকে নিয়ে অনেক কথা শুনেছিলাম। পরে শুনি তারা আর একসঙ্গে ছবি করছে না। তখন একদিন আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কবরীর সঙ্গে তোমার এমন কী হয়েছে যে একসঙ্গে কাজ করছ না। হিরো তখন বলেছিল, ‘এসবের মধ্যে তোমার আসা দরকার নেই।’ দীর্ঘদিন পর তারা আবার একসঙ্গে কাজ করল। কিন্তু এসব নিয়ে আমি কখনোই তাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করিনি।’
হিরোর অনেক ছবিই আমি দেখেছি। ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘রংবাজ’, ‘মালামতি’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘নাচের পুতুল’, ‘ময়নামতি’ ইত্যাদি। সর্বশেষ ‘বাবা কেন চাকর’ ছবিটা দেখেছিলাম। সব ছবিই দেখে ভালো লেগেছে।