বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে মিশে আছে নিজস্ব খাদ্যাভ্যাস, এর একটি স্বতন্ত্র অনুষঙ্গ পিঠাপুলি। তাইতো নবান্ন বা পৌষ-পার্বণ, সব উৎসবই হয় নতুন ধানের চালের পিঠাকে কেন্দ্র করে।
হিমেল হাওয়া বয়ে যাওয়ার এ সময়টাই পিঠার। গ্রামের মানুষ প্রায় প্রতিদিনই
পিঠার স্বাদ নেয়। তবে শীত শীত বাতাসে পিঠা বঞ্চিত থাকে না নগরবাসীও। অলিগলি
থেকে শুরু করে ব্যস্ত রাস্তার ফুটপাত ও দোকানে তৈরি হয় হরেক রকমের পিঠা।
এসব দোকানে গিয়ে নগরবাসী নিচ্ছে পিঠার স্বাদ।
হেমন্তের শুরুতেই শহরের রাস্তার ধারে মাটি ও গ্যাসের চুলা নিয়ে বসে যায়
মৌসুমি পিঠা বিক্রেতারা। এসব দোকানে মেলে চিতই, ভাপাপিঠা। গরম-গরম ধোঁয়া
ওঠা চিতই পিঠার মূল আকর্ষণ ভর্তা। খেজুরের গুড় ও নারিকেল দিয়ে তৈরি ভাপাও
পাওয়া যাবে এসব অস্থায়ী পিঠার দোকানে। এছাড়া কিছু দোকান বছরব্যাপীই পিঠা
তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে সংযুক্ত। হরেক রকম পিঠার সন্ধান মেলে সেখানেও।
ঐহিত্য ও আভিজাত্যের মিশেলে অনন্য রাজধানীর অন্যতম পিঠার বাজার বেইলি রোড
এলাকা। শীত উপলক্ষে বরাবরই বেইলি রোডের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে ওঠে ‘পিঠা ঘর’।
অন্যান্য বছরের মতো এবারও বেইলি রোডে হরেক রকমের পিঠা নিয়ে সাজানো হয়েছে
পিঠা ঘরগুলো। ভোজন রসিকদের কাছে এসব পিঠা ঘরের আকর্ষণ ব্যাপক। এখানে মেলে
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পিঠাও।
বেইলি রোডের পিঠা ঘরে দেখা যায়, ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, ডিম চিতই, মাংসের
পিঠা, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা, তেলের পিঠা, জামাই পিঠা, সঙ্গে বেশ কয়েক ধরনের
মজাদার ঝালের পিঠাও আছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের নকশি পিঠা তো আছেই। আর
এখানকার পিঠার সুনাম ও মানের কারণে বেচাবিক্রিও বেশ ভালো।
কথা হয় পিঠার ক্রেতা আরিফুর রহমানের সঙ্গে।
ঢাকা এসেছেন অফিসের কাজে। গ্রামের বাড়িতে শীতে পিঠাপুলি তৈরি হয়। ঢাকায় এসে পথের পাশে গরম পিঠা দেখে লোভ সামলাতে পারেননি তিনি।
গরম চিতই পিঠায় ফুঁ দিতে দিতে সরিষার ভর্তা লাগিয়ে খাচ্ছিলেন। কথা হলে
বলেন, বাড়িতে যেসব পিঠা খাই, সেগুলোর স্বাদ এক রকম। সেগুলো আবার রেখে রেখে
খাই। ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এখানে গরম-গরম খাওয়ার স্বাদ অন্য রকম।
দোকানিরা বললেন, চিতই পিঠার মূল আকর্ষণ কয়েক পদের ভর্তা। সরিষা, কালোজিরা,
ধনেপাতা, শুঁটকি, ডালের ভর্তার চাহিদা বেশি। একটি চিতই পিঠা বিক্রি হয় ১০
টাকায়। ভাপা পিঠাও বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা করে। চিতই, ভাপার পাশাপাশি
নারিকেল, কলা, তাল দিয়েও তৈরি পিঠাও দেখা গেছে কিছু দোকানে। মাংস দিয়ে
বানানো পিঠা পাওয়া যায় কোথাও কোথাও।
তিনি বলেন, এখানে সবমিলিয়ে ৪৫ রকমের পিঠা পাওয়া যায়। এর মধ্যে অন্যতম পাটিসাপটা, মালপোয়া, রসফুল, নারকেলের ভাজা পুলি, ঝাল পোয়া, ফিরনি, বিবিখানা, পুডিং, ক্ষীর কুলি, মুগসোলা, শাহী রস পাকান, পান পিঠা, সর ভাজা, পানতোয়া, লবঙ্গ লতিকা, শাহী মালাই, নারিকেলের সিদ্ধ পুলি ও ক্ষীর লুচি। এসব পিঠা ১৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করা হয়। এছাড়া ২শ টাকা থেকে ৬৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে গরু ও খাসির হালিম।
শহরের অনেক দোকানে এখন শীতের পিঠা কিনতে পাওয়া যায়। ব্যস্ত জীবনে পিঠা তৈরি করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার হলেও শহরের বেশ কিছু জায়গায় গড়ে উঠেছে পিঠাঘর। মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আয়োজিত শীতের পিঠা উৎসব সাড়া ফেলে দেয় শহুরে জীবনে। তাই শহরের বিলাসিতায় থাকা অনেকেই এখন সহজে পেয়ে যায় বিভিন্ন ধরনের পিঠা। আর যাঁদের হাতে সময় নেই কিংবা অন্য কোনো কারণে পিঠার দোকানে যেতে পারছেন না, তাঁদেরও চিন্তা নেই। ঘরে বসে অনলাইনে অর্ডার করে তাঁরা নিতে পারবেন পিঠার স্বাদ।