শেয়ারবাজারে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীরা। আবার নতুন করে শেয়ারবাজারে যুক্ত হচ্ছেন অনেকেই। তাতে শেয়ারবাজারে কিছুটা গতি ফিরতে শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল বৃহস্পতিবার এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। পাশাপাশি সূচক বেড়ে প্রায় চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠেছে।
ঢাকার বাজারে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে গতকাল লেনদেন হয় ৭৫৩ কোটি টাকার। ডিএসইতে এটি এক মাসের ব্যবধানে সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে সর্বশেষ গত ১৩ ডিসেম্বর এই বাজারে ৭৭০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।
লেনদেনের পাশাপাশি গতকাল সূচকও বেড়েছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ১৬ পয়েন্ট বেড়ে আবারও ৬ হাজার ৩০২ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। এর আগে সর্বশেষ ২১ সেপ্টেম্বর এই সূচক ৬ হাজার ৩১০ পয়েন্ট ছিল। এরপর কখনো তা আর ৬ হাজার ৩০০ পয়েন্টের ঘর অতিক্রম করেনি।
এদিকে নির্বাচনের পর শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ যে বাড়ছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায় নতুন বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব খোলার তথ্যে। ১ থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৮ কার্যদিবসে শেয়ারবাজারে বিও হিসাব বেড়েছে ২ হাজার ৪১৮টি। তবে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন-পরবর্তী মাত্র চার কার্যদিবসে বিওর সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ৯২। আর গতকাল এক দিনেই নতুন বিও হিসাব খোলা হয়েছে ২৫৩টি। বিও হিসাব সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এখন ব্যক্তি পর্যায়ের ছোট, মাঝারি ও বড় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ বাজারে লেনদেনে সক্রিয় হতে শুরু করেছে। এসব বিনিয়োগকারীর বড় অংশই দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয় ছিল। নির্বাচনের পর বাজার গতিশীল হতে শুরু করায় নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীরাও এখন সক্রিয় হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, শেয়ারবাজারে লেনদেনের শীর্ষে থাকা ব্রোকারেজ হাউস লংকাবাংলা সিকিউরিটিজে গতকাল ১১০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ কোটি টাকার বেশি শেয়ার কেনা হয়েছে, আর বিক্রি হয়েছে ৬০ কোটি টাকার শেয়ার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানান, ছয় মাসের বেশি সময় পর গতকাল তাঁদের প্রতিষ্ঠানটি শতকোটি টাকার বেশি লেনদেন করেছে।
এদিন বাজারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজে। প্রতিষ্ঠানটিতে ৮৯ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬ কোটি টাকার শেয়ার কেনার বিপরীতে বিক্রি হয়েছে ৪৩ কোটি টাকার শেয়ার।
গতকাল লেনদেনের শীর্ষ পাঁচ ব্রোকারেজ হাউসের মধ্যে বাকি তিনটি হলো ইবিএল সিকিউরিটিজ, সিটি ব্রোকারেজ ও ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ। এর মধ্যে ইবিএল সিকিউরিটিজ প্রায় ৭৭ কোটি, সিটি ব্রোকারেজ ও ব্র্যাক ইপিএলে ৬২ কোটি টাকা করে লেনদেন হয়েছে। শীর্ষ পাঁচ ব্রোকারেজ হাউসে এদিন মোট ৪০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে বিক্রির চেয়ে বেশি শেয়ার কেনা হয়েছে ইউসিবি, সিটি ব্রোকারেজ ও ব্র্যাক ইপিএলে।
সিটি ব্রোকারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিসবাহ উদ্দিন আফফান ইউসুফ বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিশ্রেণির অনেক বিনিয়োগকারী সক্রিয় হয়েছে। গতকাল নতুন করে অনেকে বিনিয়োগ করেছেন। বাজার গতিশীল থাকলে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে।’
এদিকে বাজারে গতি ফিরতে শুরু করায় কিছু কিছু ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইস থেকে ওপরে উঠে এসেছে। যেমন স্কয়ার ফার্মার শেয়ারের দাম গত কয়েক দিনে বেড়ে ২১১ টাকায় উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকে ছিল।
বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউআইইউ) বাণিজ্য অনুষদের ডিন মোহাম্মদ মুসা প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ছিল, সেটি কেটে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা আবারও বাজারমুখী হতে শুরু করেছেন। তবে এখন যেসব শেয়ারের দাম বাড়ছে, সেগুলো দিয়ে বাজারের প্রকৃত আচরণ বোঝা যাবে না। মূল্যবৃদ্ধিতে এখনো স্বল্প মূলধনি ও কারসাজির শেয়ারেরই দাপট বেশি।
মোহাম্মদ মুসা আরও বলেন, নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে। চলমান অর্থনৈতিক বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলায় সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, তার ওপরই নির্ভর করছে বাজারের ভবিষ্যৎ।